CLASS-X

আলোর বিচ্ছুরণ ও বিক্ষেপণ: Class 10 Notes

SHARE

10. আলোর বিচ্ছুরণ

সাদা বা মিশ্র আলো যখন কোনো প্রতিসারক মাধ্যম বিশেষ করে প্রিজমের মধ্য দিয়ে গমন করে তখন এই আলো বিভিন্ন বর্ণের বিভাজিত হয়। এই ঘটনাকে আলোর বিচ্ছুরণ বলে। 

বিচ্ছুরণ কেন হয়?

আলোর বিচ্ছুরণ
আলোর বিচ্ছুরণ

স্নেলের সূত্র থেকে জানা যায়, আলোকরশ্মির প্রতিসরাঙ্ক তার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বা বর্ণের উপর নির্ভর করে।  সাদা আলো বা মিশ্র বর্ণের আলোতে যেহেতু বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যসম্পন্ন রশ্মি বর্তমান তাই এদের প্রতিসরাঙ্ক ভিন্ন হয় এর ফলে এরা বিভিন্ন প্রতিসারক কোণে প্রতিসৃত হয় ফলে বিভিন্ন বর্ণগুলি একে অপরের থেকে দূরে সরে যায়।

কচির সূত্র- কোনো প্রতিসারক মাধ্যমে λ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোক রশ্মি প্রতিসৃত হলে ওই আলোর প্রতিসরাঙ্ক \mu=A+\frac{B}{\lambda^2}। যেখানে A ও B হল ধ্রুবক রাশি। অর্থাৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেলে প্রতিসরাঙ্ক কমে।
দৃশ্যমান সাতটি রং-এ লাল বর্ণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি তাই এর প্রতিসরাঙ্ক (\mu_R) সবচেয়ে কম। আবার, বেগুণি বর্ণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম হওয়ায় এর প্রতিসরাঙ্ক \mu_V সবচেয়ে বেশি।

আলোর গতিবেগ ও মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক- 

 a মাধ্যমে আলোর বেগ v_a ও b মাধ্যমে আলোর বেগ v_b হলে; আলোর তরঙ্গতত্ত্ব অনুযায়ী
a মাধ্যমের সাপেক্ষে b মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক (μ) = \frac{v_a}{v_b}
a মাধ্যমটি শূন্য হলে v_a=c ধরা হয়।
তাহলে শূন্য মাধ্যমের সাপেক্ষে b মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক (μ)
= b মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক
= \frac{c}{v_b}

সাদা আলোর মধ্যে কোন বর্ণের কৌণিক চ্যুতি সবথেকে বেশি?

সাদা আলোর কৌণিক চ্যুতি
ধরি, বায়ু মাধ্যম থেকে অন্য আরেকটি মাধ্যমে সাদা আলো প্রবেশ করছে। আপতন কোণ i। প্রতিসৃত প্রান্তীয় বর্ণ লাল ও বেগুনির প্রতিসরাঙ্ক যথাক্রমে \mu_R\mu_V। প্রতিসরণ কোণ যথাক্রমে i_Ri_V
কচির সূত্র অনুসারে, \mu_R<\mu_V
or, \frac{\sin i}{\sin r_R} < \frac{\sin i}{\sin r_V}  স্নেলের সূত্রানুসারে
or, \frac{1}{\sin r_R} < \frac{1}{\sin r_V}
or, \sin r_R > \sin r_V
or, r_R > r_V
or, -r_R < -r_V
or, (i-r_R) <(i -r_V)
∴ লাল আলোর কৌণিক চ্যুতি < বেগুনি আলোর কৌণিক চ্যুতি।

11. আলোক তরঙ্গ

কম্পাঙ্ক- আলোর গতিপথে কম্পনশীল কোনো কণা একক সময়ে যতগুলি পূর্ণ কম্পন তৈরি করে তাকে করে তাকে কম্পাঙ্ক বলে।
একক- Hz।
তরঙ্গদৈর্ঘ্য- আলোর গতিপথে সমদশায় থাকা পরপর দুটি কণার দূরত্বকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলে।
একক- m।
তরঙ্গবেগ- আলোক তরঙ্গ একক সময়ে যে দূরত্ব যায় তাকে তরঙ্গবেগ বলে।
একক- m/s।

আলোকে হল তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ। তরঙ্গদৈর্ঘ্য বা কম্পাঙ্ক অনুসারে এর  অনেক ভাগ রয়েছে। নিচে তার তালিকা দেওয়া হল।

তরঙ্গদৈর্ঘ্য (m) কম্পাঙ্ক (Hz)
γ-রশ্মি 6×10-15 - 10-11  3×1019 - 5×1023
X-রশ্মি 10-11 - 3×10-8 106 - 3×1019
অতিবেগুনি রশ্মি 3.75×10-9 - 4×10-7 7.5×1014 - 8×1016
দৃশ্যমান আলো 4×10-7 - 8×10-7 4×1014 - 7.5×1014
অবলোহিত রশ্মি 8×10-7 - 3×10-3 1011 - 4×1014
মাইক্রোওয়েভ 3×10-3 - 0.1 3×109 - 1012
বেতার তরঙ্গ 0.1 -কয়েক কিমি কয়েক হার্ৎজ থেকে 3×109

কয়েকটি তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের ব্যবহার ও ক্ষতিকারক দিক

অতিবেগুনি রশ্মি-

ব্যবহার- i) জীবাণুমুক্ত করার কাজে লাগে।, ii) মানবদেহে ভিটামিন D সংশ্লেষ করে।, iii) Forensic গবেষণায় ব্যবহৃত হয়।, 

ক্ষতিকারক প্রভাব- i) স্কিন ক্যানসারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।, ii) চোখের রেটিনা নষ্ট করে দিতে পারে।, iii) গাছের ক্লোরফিল ধ্বংস করে দিতে পারে।

X রশ্মি-

ব্যবহার- i) চিকিৎসাক্ষেত্রে ও রোগ নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয়।, ii) Forensic ও Custom বিভাগে তল্লাশির জন্য ব্যবহার করা হয়।, iii) শিল্পক্ষেত্রে পদার্থে কোনো ত্রুটি খোঁজার জন্য, পাইপে ফাটল আছে কি না জানার জন্য ব্যবহৃত হয়।, iv) X-ray টেলিস্কোপের সাহায্যে ব্ল্যাক হোল ও নিউট্রন স্টার সন্ধানে ব্যবহৃত হয়।

ক্ষতিকারক প্রভাব- i)  বেশি মাত্রায় X-ray ত্বক ও  ও কোশেরর ক্ষতি করে।, ii) বেশি পরিমাণে X-ray পড়লে  সাময়িক কালের জন্য অথবা স্থায়ীভাবে চুল পড়ে যেতে পারে।, iii) ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

γ রশ্মি-

ব্যবহার- i) ক্যান্সার কোশ ধ্বংসের জন্য ব্যবহার করা হয়।, ii) চিকিৎসার যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।, iii) মহাকাশ গবেষণায় ব্ল্যাক হোল ও নিউট্রন স্টার সন্ধানে ব্যবহৃত হয়।

ক্ষতিকারক প্রভাব- i) এটি সুস্থ কোশকে ধ্বংস করে দিতে পারে এবং কোনো অঙ্গকে অকেজো করে দিতে পারে।, ii) DNA-এর মিউটেশন ঘটিয়ে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

11. আলোর বিক্ষেপণ

বায়ু মাধ্যম দিয়ে যখন আলোক রশ্মি সমান্তরালভাবে গমন করে তখন সেই আলো মাধ্যমের কণা দ্বারা শোষিত হয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পরে। এই ঘটনাকে বিক্ষেপণ বলে।

বিজ্ঞানী র‍্যালে প্রমাণ করেন যে বিক্ষেপণের তীব্রতা আলো তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের চতুর্থ ঘাতের ব্যস্তানুপাতী (I ∝ \frac{1}{\lambda^4}  )

দিনের বেলা আকাশ নীল দেখার কারণ-
আকাশ নীল রং দেখার মূল কারণ হলো আলোর বিক্ষেপণ ধর্ম।  বায়ু মাধ্যম দিয়ে আলো যখন গমন করে তখন সাদা আলোর সাতটি রং বাতাসের কণাদ্বারা শোষিত ও বিক্ষিপ্ত হয়।  বিজ্ঞানী র‍্যালের  দেখিয়েছেন বিক্ষেপণের তীব্রতা আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চতুর্থ ঘাতের ব্যস্তানুপাতী (I\propto \frac{1}{\lambda^4})।  যেহেতু বেগুনি, নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম তাই এগুলি বায়ু মাধ্যম দিয়ে যত অগ্রসর হয় ততই ছড়িয়ে পড়ে।  সূর্য থেকে আগত দৃশ্যমান আলোতে বেগুনির পরিমাণ কম। তাছাড়াও বেগুনি আলোর চেয়ে নীল আলোয় মানুষের চোখ বেশি সংবেদনশীল। সেজন্য আকাশকে নীল দেখায়।

সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময় সূর্যকে লাল দেখায় কেন ?

সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সময় সূর্যকে লাল দেখায় কেন?সূর্য যখন দিগন্ত রেখার কাছাকাছি বা দিগন্ত রেখা অতিক্রম করে অবস্থান করে তখন সূর্য থেকে আগত আলোকরশ্মি চোখে পৌছাতে অনেকটা পথ অতিক্রম করতে হয়। এই সময় বিক্ষেপণের জন্য সাতটি রং-এর মধ্যে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রংগুলি বাতাসের মধ্যে যত এগোতে থাকে তত শোষিত হতে থাকে। অবশেষে বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট লাল আলোটি চোখে পৌঁছায়। সেজন্য সূর্যকে লাল মনে হয়।

SHARE

Related Posts

রাসায়নিক বন্ধন Notes Class 10-NaCl অনুর অস্তিত্ব নেই কেন?

NaCl অনুর অস্তিত্ব নেই কেন?

  একটি তড়িৎযোজী যৌগ। সোডিয়াম পরমাণু একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে ও ক্লোরিন পরমাণু সেই ইলেকট্রন গ্রহণ করে তৈরি করে। যা তীব্র তড়িৎ আকর্ষণ বলের জন্য কাছাকাছি অবস্থান করে।…

 হাইড্রোজেনকে দুষ্ট মৌল বলা হয় কেন?

 হাইড্রোজেনকে দুষ্ট মৌল বলা হয় কেন?

 হাইড্রোজেনকে দুষ্ট মৌল বলা হয় কেন? => মেন্ডেলিফ পর্যায় সারণিতে হাইড্রোজেনকে বসানোর সময় লক্ষ্য করেন যে এই মৌলটির কিছু ধর্ম Gr-IA এবং Gr-VIIB (হ্যালোজেন) এর সঙ্গে মিলে যায়।…

দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক, ক্ষেত্রফল প্রসারণ গুণাঙ্ক ও আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্ক-এর মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় কর।

দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক, ক্ষেত্রফল প্রসারণ গুণাঙ্ক ও আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্ক-এর মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় কর।

ধরি,একটি ঘনকের প্রাথমিক দৈর্ঘ্য ।  θ পরিমাণ উষ্ণতা বৃদ্ধিতে দৈর্ঘ্য হয় দৈর্ঘ্য প্রসারণ গুণাঙ্ক α হলে,                                  (1) or, [উভয় পাশে বর্গ করে পাই] or,      …

রাসায়নিক বন্ধন Notes Class 10-NaCl অনুর অস্তিত্ব নেই কেন?

রাসায়নিক বন্ধন Notes Class 10

রাসায়নিক বন্ধন এই মহাবিশ্বে যতগুলি মৌল রয়েছে তাদের মধ্যে নিষ্ক্রিয় মৌলগুলির কক্ষপথে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইলেকট্রন থাকে। এই অবস্থায় মৌলগুলি সর্বনিম্ন শক্তিস্তরে অবস্থান করে।    অন্যান্য মৌলগুলিও ইলেকট্রন গ্রহণ,…

আলো Class 10 Notes প্রতিসরণ অংশ part 2

আলো Class 10 Notes প্রতিসরণ অংশ part 2

4. আলোর প্রতিসরণ- আলো তির্যকভাবে এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে প্রবেশ করলে আলোকরশ্মির গতির অভিমুখের পরিবর্তন হয়। এই ঘটনাকে প্রতিসরণ বলে।  যে মাধ্যমে আলোর বেগ বেশি হয় তাকে লঘু…

লেন্স সম্পর্কিত কয়েকটি রাশি- class 10 আলো Notes আলোক কেন্দ্র কাকে বলে ?

আলোক কেন্দ্র কাকে বলে? (চিত্র সহ সংজ্ঞা)

আলোক কেন্দ্র কাকে বলে? => আলোক কেন্দ্র (Optical Centre)- লেন্সে আপতিত ও প্রতিসরণের পর নির্গত রশ্মিদ্বয় হয় পরস্পরের সমান্তরাল হয় তাহলে ওই রশ্মি প্রধান অক্ষকে যে বিন্দুতে ছেদ…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!