Table of Contents
Toggleগ্যাসের আচরণ Notes Class-10
1. গ্যাস সম্পর্কিত কয়েকটি ভৌত রাশি।
আয়তন (volume)-
কোনো বস্তু ত্রিমাত্রিক অঞ্চলে যতটা যায়গা দখল করে থাকে তাকে আয়তন বলে।
আয়তন= ক্ষেত্রফল×উচ্চতা (সাধারণত)
SI একক | CGS একক | সম্পর্ক |
m3 | cm3 | 1m3=(100cm)3=106cm3 |
- 1 litre= 1dm3=(10cm)3=1000cm3
- আয়তনের মাত্রা-[L3]
- আয়তন মাপা হয়- মাপনী চোঙের সাহায্যে।
গ্যাসের অণুগুলি অনেক দূরে অবস্থানে করে বলে এদের মধ্যে দূর্বল আকর্ষণ বল কাজ করে। তাই গ্যাসকে যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের আকার ধারণ করে অর্থাৎ গ্যাসের আয়তন ও পাত্রের আয়তন সমান হয়। অবশ্যই এই ক্ষেত্রে গ্যাসের অণুগুলির আয়তনকে নগন্য ধরা হয়।
চাপ (pressure)-
একক ক্ষেত্রফলে প্রযুক্ত বলকে চাপ বলে।

∴চাপ=বল×ক্ষেত্রফল ।
- চাপের মাত্রা- = \frac{বলের\;মাত্রা}{ক্ষেত্রফলের\;মাত্রা} =[\frac{MLT^{-2}}{L^2}]=[ML^{-1}T^{-2}]
SI একক CGS একক সম্পর্ক
SI একক | CGS একক | সম্পর্ক |
N/m2 বা Pa | dyne/cm2 | 1 N/m2= \frac{{10}^5dyne}{(100{cm)}^2}= 10 dyne/cm2 |
- চাপ মাপা হয় ম্যানোমিটার ও ব্যারোমিটার দিয়ে।
উষ্ণতা (Temperature)-
উষ্ণতা বা তাপমাত্রা হল তাপের অনুভূতি। বস্তুতে যত বেশি তাপ তাপ থাকবে উষ্ণতা তত বেশি মনে হবে। তাপ সর্বদা উষ্ণ থেকে শীতল বস্তুতে যায়।
SI একক CGS একক সম্পর্ক
SI একক | CGS একক | সম্পর্ক |
K বা কেলভিন | ºC বা সেলসিয়াস | tºC=(273+t)K |
- উষ্ণতা মাপক যন্ত্রের নাম থার্মোমিটার।
2. বয়েলের সূত্র-
স্থির তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন চাপের সঙ্গে ব্যস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয়।
বয়েলের সূত্রের গাণিতিক রূপ-
কোনো গ্যাসের চাপ = p ও আয়তন= V হয় তাহলে ওই বয়েলের সূত্র অনুযায়ী
p\propto\frac{1}{V} যখন উষ্ণতা ও ভর স্থির।
তাহলে লেখা যায়, p=\frac{k}{V} [k= ধ্রুবক]
or, pV=k
or,p_1V_1=p_2V_2





3. চার্লসের সূত্র-
স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের কোন গ্যাসের উষ্ণতা প্রতি 1ºC বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য ওই গ্যাসের আয়তন 0ºC উষ্ণতার আয়তনের 1/273 অংশ বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়।
- 1/273 অংশটিকে স্থির চাপে গ্যাসের আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্ক বলে।
চার্লসের সূত্রের গাণিতিক রূপ- ধরি, 0ºC উষ্ণতায় কোনো গ্যাসের আয়তন V_0
1\degree C উষ্ণতা বৃদ্ধিতে গ্যাসের আয়তন হবে V_0+V_0\times\frac{1}{273} = V_0(1+\frac{1}{273})=V_1
2\degree C উষ্ণতা বৃদ্ধিতে গ্যাসের আয়তন হবে V_1+V_1\times\frac{1}{273} = V_1(1+\frac{1}{273}) = V_0{(1+\frac{1}{273})}^2\approx V_0(1+\frac{2}{273})
3\degree উষ্ণতা বৃদ্ধিতে গ্যাসের আয়তন হবে V_2+V_2\times\frac{1}{273} = V_2(1+\frac{1}{273})= V_0{(1+\frac{1}{273})}^3= V_0(1+\frac{3}{273})
…. …. ….. …. …. ….
t\degree C উষ্ণতা বৃদ্ধিতে গ্যাসের আয়তন হবে V= V_0{(1+\frac{1}{273})}^t \approx V_0(1+\frac{t}{273}) [যখন t এর মান যখন কম]
চার্লসের সূত্র থেকে পরম শূন্য উষ্ণতার ধারণা
চার্লসের সূত্র অনুযায়ী আমরা জেনেছি যে, সেলসিয়াস স্কেলে উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে গ্যাসের আয়তন সমানুপাতে বৃদ্ধি পায়। তাহলে উষ্ণতা হ্রাস পেলে আয়তনও হ্রাস পাবে। প্রশ্ন হল, এমন কোন উষ্ণতায় গ্যাসের আয়তন শূন্য হয়ে যাবে?
চার্লসের সূত্র অনুযায়ী, t\degc উষ্ণতা বৃদ্ধিতে গ্যাসের আয়তন, V= V_0(1+\frac{t}{273})
V=0 হলে, V_0(1+\frac{t}{273})=0
or, 1+\frac{t}{273}=0
or, \frac{t}{273}=-1
or, t=-273
সুতরাং -273ºC উষ্ণতায় গ্যাসের আয়তন শূন্য হবে।
কিন্তু, কোন গ্যাসের আয়তন শূন্য হবে?
যেহেতু, সকল গ্যাসের ক্ষেত্রেই চার্লসের সূত্র প্রযোজ্য; তাই সকল গ্যাসের ক্ষেত্রেই -273ºC উষ্ণতায় আয়তন শূন্য হবে।
তাহলে চার্লসের সূত্র অনুযায়ী V-t লেখচিত্র হবে নিম্নরূপ-

পরম স্কেল বা কেলভিন স্কেল
সকল গ্যাসের ক্ষেত্রে যেহেতু -273ºC উষ্ণতায় আয়তন শূন্য হচ্ছে (গাণিতিকভাবে) তাহলে একটি নতুন তাপমাত্রার স্কেল তৈরি করা যাক; যেখানে আয়তন শূন্য হলে তাপমাত্রাও শূন্য হবে এবং 1ºC সেলসিয়াস বৃদ্ধি = ওই স্কেলে একক পরিমাণ বৃদ্ধি। এই নতুন স্কেলটি বলে কেলভিন স্কেল বা পরম স্কেল।
কেলভিন স্কেল অনুযায়ী, 1ºC সেলসিয়াস বৃদ্ধি = 1 kelvin পরিমাণ বৃদ্ধি
আবার, -273ºC=0 kelvin
∴কোনো তাপমাত্রা সেলসিয়াস স্কেলে tºC হলে যদি কেলভিন স্কেলে TK হয় তাহলে, t+273=T
কেলভিন স্কেলে চার্লসের সূত্র-
চার্লসের সূত্র আবার লিখি,
V= V_0(1+\frac{t}{273})
or, V= V_0(\frac{273+t}{273})
or, V= V_0.\frac{T}{273} [∵273+t]
or, V∝T
সুতরাং, \frac{V_1}{T_1}=\frac{V_2}{T_2}
এটিও চার্লসের সূত্রের গাণিতিক রূপ
V-T লেখচিত্র হবে নিম্নরূপ

4. গে-লুসাক-এর চাপ সূত্র-
স্থির আয়তনে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের উষ্ণতা প্রতি 1ºC বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য ওই গ্যাসের চাপ 0ºC উষ্ণতার চাপের 1/273 অংশ বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়।
1/273 অংশটিকে স্থির আয়তনে গ্যাসের চাপ গুণাঙ্ক বলে।
0ºC উষ্ণতায় কোনো গ্যাসের চাপ P_0
tºC উষ্ণতা বৃদ্ধিতে গ্যাসের চাপ হবে P=P_0(1+\frac{t}{273})
কেলভিন স্কেল অনুযায়ী, P=P_0(\frac{273+t}{273}) = P_0\frac{T}{273}
or, P∝T
এটি চাপের সূত্রের গাণিতিক রূপ।
5. বয়েল ও চার্লসের সূত্রের সমন্বয়
বয়েলের সূত্র অনুযায়ী,V∝\frac{1}{p} যখন উষ্ণতা ও ভর স্থির
চার্লসে সূত্র অনুযায়ী,V∝T যখন চাপ ও ভর স্থির
সূত্র দুটির সমন্বয় করে পাই, V\propto\frac{T}{p}
or, V=k\frac{T}{p} or, pV=kT
or,\frac{pV}{T}=k or, \frac{p_1V_1}{T_1}=\frac{p_2V_2}{T_2}
6. অ্যাভোগাড্রো প্রকল্প
সমান চাপ ও উষ্ণতায় সম-আয়তনের সকল গ্যাসে সমান সংখ্যক অণু থাকে।
অ্যাভোগাড্রো প্রকল্প অনুযায়ী যদি দুটি সমান আয়তনের পাত্রে সমান চাপ ও উষ্ণতায় দুটি পৃথক গ্যাস নেওয়া হয় তাদের ভর আলাদা হলেও তাদের মধ্যে অণু সংখ্যা সমান হবে। অণু সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া মানে মোল সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া । আবার, গ্যাসের চাপ ও উষ্ণতা একই রেখে যদি গ্যাসের আয়তন বৃদ্ধি করা হয় তাহলে অনু সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। সেদিক থেকে বলা যায় গ্যাসের আয়তন ও মোল সংখ্যা পরস্পরের সমানুপাতী। অর্থাৎ
V∝ n যেখানে n হল মোল সংখ্যা।
গে-লুসাকের গ্যাস আয়তন সূত্র-
স্থির চাপ ও উষ্ণতায় দুই বা ততোধিক গ্যাসের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়াকারী গ্যাসগুলির আয়তন সরল অনুপাতে থাকে এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলি যদি গ্যাস হয় সেটিও বিক্রিয়াকারী গ্যাসগুলির আয়তনের সাথে সরল অনুপাতে থাকে।
অ্যাভোগাড্রো প্রকল্প থেকে গে-লুসাকের গ্যাস আয়তন সূত্র-
ধরি, নির্দিষ্ট চাপ ও উষ্ণতায় P ও Q দুটি গ্যাসের অণু সংখ্যা যথাক্রমে p ও q। এদের বিক্রিয়া উৎপন্ন গ্যাস R-এর অণু সংখ্যা r।
তাহলে p+q=r
আরও ধরি, P গ্যাসের একক আয়তনে n সংখ্যক অণু রয়েছে। অ্যাভোগাড্রো প্রকল্প অনুযায়ী বলা যায়, ওই চাপ ও উষ্ণতায় Q ও R গ্যাসের একক আয়তনে ওই n সংখ্যক অণু থাকবে।
তাহলে, P গ্যাসের n সংখ্যক অণুর আয়তন 1।
P গ্যাসের 1 সংখ্যক অণুর আয়তন \frac{1}{n}/।
P গ্যাসের p সংখ্যক অণুর আয়তন \frac{p}{n}।
একইভাবে Q গ্যাসের q সংখ্যক অণুর ও R গ্যাসের r সংখ্যক অণুর আয়তন যথাক্রমে \frac{q}{n}:\frac{r}{n}
তিনটি গ্যাসের আয়তনের অনুপাত \frac{p}{n}:\frac{q}{n}:\frac{r}{n} = p:q:r যা সরল অনুপাতে আছে।
7. আদর্শ গ্যাসের সমীকরণ-
বয়েলের সূত্র অনুযায়ী, V\propto\frac{1}{p} যখন উষ্ণতা ও ভর স্থির
চার্লসে সূত্র অনুযায়ী, V\propto T যখন চাপ ও ভর স্থির
অ্যাভোগাড্রো প্রকল্প অনুযায়ী, V\ \propto n যখন চাপ ও উষ্ণতা স্থির।
সূত্র তিনটি সমন্বয় করে পাই- V\propto\frac{nT}{p} or, V=R.\frac{nT}{p}
or, pV=nRT
R- কে সর্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক বলা হয়। কারণ সকল গ্যাসের ক্ষেত্রে এর মান সমান হয়।
আবার, মোল সংখ্যা=\frac{ভর}{আণবিক\;গুরুত্ব}
or, n=\frac{W}{M}
তাহলে আদর্শ গ্যাসের সমীকরণ লেখা যাবে pV=\frac{W}{M}RT
সর্বজনীন গ্যাসধ্রুবকের মান
STP-তে P= 76 cm Hg = 76\times13.6\times980dyne.cm^{-2} ও T=0ºC=273K
n=1 mole হলে V =22.4 L = 22.4×1000 cm3
তাহলে, R=\frac{pV}{nT}
=\frac{76\times13.6\times980\times22.4\times100}{1\times273}\frac{dyne}{{\rm cm}^2}.\frac{{\rm cm}^3}{mol.K}
=8.311\times{10}^7erg.mol^{-1}.K^{-1} (CGS এককে)
SI এককে R-এর মান 8.311\ J.mol^{-1}.K^{-1}
L.atm এককে R-এর মান-
R=\frac{pV}{nT}
=\frac{1\times22.4}{1\times273}L.atm.mol^{-1}.K^{-1} =0.082 L.atm.mol^{-1}.K^{-1}
R-এর মাত্রা =\frac{চাপের\;মাত্রা×আয়তনের\;মাত্রা }{পদার্থের\;পরিমাণের\;মাত্রা×উষ্ণতার\;মাত্রা}
= \frac{[ML^{-1}T{-2}].[L^3]}{[ mol][θ]}
=[ML^2T^{-2}mol^{-1}\theta^{-1}]
8. গ্যাসের গতিতত্ত্বের কয়েকটি স্বীকার্য।
(i) গ্যাসের অণুগুলির অতি ক্ষুদ্র বিন্দু ভরের ন্যায়। অণুগুলির মোট আয়তন পাত্রের তুলনায় নগণ্য।
(ii) গ্যাসের অণুর বেগ শূন্য থেকে অসীম পর্যন্ত হতে পারে।
(iii) পরপর দুটি সংঘর্ষের মধ্যে অণুগুলি সমবেগে সরলরেখায় চলে
(iv) গ্যাসের অণু নিজেদের মধ্যে ও পাত্রের দেওয়ালের সঙ্গে স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ ঘটায়।
(v) গ্যাসের অণুর নিজেদের মধ্যে কোনোরকম আকর্ষণ বল থাকে না।
9. ব্যাপন-
যে ধর্মের জন্য দুটি ভিন্ন ঘনত্বের গ্যাস বা তরল পদার্থ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিশ্রিত হয় এবং সমস্বত্ব মিশ্রণ আনার চেষ্টা করে তাকে ব্যাপন বলে।
উদাহরণ - (i) ঘরের এক কোনায় ধূপ জ্বালিয়ে দিলে সমস্ত ঘরে ধীরে ধীরে ধূপের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
(ii) বালতিতে এক ফোটা নীল রং দিলে সেটি নিজের থেকেই বালতির সমস্ত অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
ব্যাপনের জন্য দায়ী হলো অণুদের গতীয় অবস্থা। যেহেতু উষ্ণতা বৃদ্ধিতে অণুর গতি বৃদ্ধি পায় তাই ব্যাপনের হারও বৃদ্ধি পাবে।
10. আদর্শ গ্যাসের আচরণ থেকে বাস্তব গ্যাসের বিচ্যুতি
আদর্শ গ্যাসের ক্ষেত্রে ধরা হয় যে গ্যাসের অণুগুলির আয়তন পাত্রের তুলনায় নগণ্য। কিন্তু সূক্ষ্মভাবে বিচার করলে দেখা যাবে অণুগুলির আয়তন কিছুটা হলেও আছে। তাই যখন গ্যাসের ঘনত্ব বেশি হয় তখন অণুর আয়তন উপেক্ষা করা যায় না। আবার, গ্যাসের গতিতত্ত্ব অনুযায়ী গ্যাসের অণুগুলি নিজেদের মধ্যে এবং পাত্রের দেওয়ালের সঙ্গে কোনো রকম আকর্ষণ বল অনুভব করে না। কিন্তু অণুগুলি নিজেদের মধ্যে এবং পাত্রের দেয়ালের সঙ্গে সামান্য হলেও তড়িৎ আকর্ষণ বল অনুভব করে। যার জন্য গ্যাসের অণুগুলি পাত্রের দেওয়ালে কিছুটা কম চাপ প্রয়োগ করে।
তবে নিম্ন চাপ ও উচ্চ উষ্ণতায় বাস্তব গ্যাস আদর্শ গ্যাসের মতো আচরণ করে।