Science

গ্যালিলিও গ্যালিলেই (Galileo Galilei)- ১৭০০ শতকের অন্যতম পদার্থ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী

SHARE
গ্যালিলিও গ্যালিলেই

Portrait of Galileo Galilei, circa 1640, by Justus Suttermans.

গ্যালিলিও গ্যালিলেই (Galileo Galilei)- ১৭০০ শতকের অন্যতম পদার্থ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী

“You cannot teach a man anything, you can only help him to find him within himself”- Galileo Galilei

   ১৭০০ শতকের শুরুর দিকে গ্যালিলিও ছিলেন আধুনিক বিজ্ঞানের নায়ক। সে সময় বিজ্ঞান চর্চার ওপর ওপর ধর্মীয় প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে ছিল। ধর্মগ্রন্থে যেহেতু লেখা রয়েছে সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে তাই একেই সত্য বলে মনে করা হতো। তবে গ্যালিলিওর আগে ১৫০০ শতকের দিকে নিকোলাস কোপারনিকাস মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে, সূর্যের চারিদিকে পৃথিবী ঘোরে এবং চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। তখন তার কথা কেউ বিশ্বাস করে নি। অবশেষে গ্যালিলিও তার আবিষ্কৃত দূরবীণ দ্বারা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার মাধ্যমে  এই সিদ্ধান্তে আসেন যে কোপারনিকাসের বক্তব্যটি সঠিক। 

পরিচিতি

    গ্যালিলিও ১৫৬৪ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ইতালির পিসা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ। গ্যালিলিও ছোটবেলায় কয়েক বছর মনস্টারিতে কাটিয়েছিলেন। এখানে থাকার পর তিনি সন্ন্যাসী হবেন বলে মনস্থ করেন। কিন্তু তার বাবা তাকে জোর করে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করান। ১৭ বছর বয়সে গ্যালিলিও পিসা বিশ্ববিদ্যালয় ওষুধ নিয়ে পড়াশোনা করতে যান। কিন্তু সেখানে তার মন বসে না। তিনি বিজ্ঞান এবং অংককে ভালোবেসে ফেলেছিলেন। সেজন্য গ্যালিলিওর বাবা তাকে অংক ও বিজ্ঞানের অধ্যাপক এর কাছে নিয়ে যান। 

    ১৭ বছর বয়সে গ্যালিলিও একদিন শহরের প্রধান গির্জার একটি ঝুলন্ত ল্যাম্পকে লক্ষ্য করছিলেন। সেই ল্যাম্পের দোলনকে তিনি পরিমাপ করে দেখেন যে প্রত্যেক দোলনে সেটি একই সময় নিচ্ছে। এটা দেখে তিনি পেন্ডুলাম আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে ১৬৫৬ সালে Christiaan Huygens  গ্যালিলিওর আবিষ্কৃত পেন্ডুলামকে কাজে লাগিয়ে পেন্ডুলাম ঘড়ি আবিষ্কার করেন।

শিক্ষকতা ও গবেষণা

    কয়েক বছর পর গ্যালিলিও কাউকে না জানিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যায়। সেই সময় খরচ চালানোর  জন্য তিনি গৃহ শিক্ষকতা শুরু করেন। ফ্লোরেন্স ও সিয়েনা শহরের আশেপাশে তিনি তার প্রিয় বিষয় অংক পড়াতে শুরু করলেন।

    এরপর 1588 সালে তিনি স্থির করলেন তিনি  বোলোনী (Bologna) বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন। ‌আবেদনও করলেন। কিন্তু তার কোনো ডিগ্রী না থাকায় তার এই আবেদন প্রত্যাখাত করা হয়। এক বছর পরে তার অধ্যাপক Clavius ও del Monte- এর সহযোগিতায় পিসা বিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সুযোগ পান।

অ্যারিস্টটল তত্ত্বের বিরোধিতা

   সে সময় একটা কথা উঠেছিল গ্যালিলিও নাকি অ্যারিস্টটলের এক তত্ত্বকে মিথ্যা প্রমাণিত করেন। অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, কোনো বস্তু যত ভারী হবে সেটি তত দ্রুত নিচে নামতে থাকবে। এক জীবনীকার এর কথা অনুযায়ী গ্যালিলিও পিসা টাওয়ারে ওঠে একই পদার্থ দিয়ে তৈরি কিন্তু বিভিন্ন আকারের কয়েকটি বল নিচে ফেলে দেন এবং দেখান যে প্রত্যেকটি বল একই সময়ে নিচে নামছে।

   কিন্তু গ্যালিলিও তার লেখায় কখনো এই ঘটনাটি উল্লেখ করেননি।। ‌ সেজন্য অনেক জীবনীকার এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। 

   গ্যালিলিও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে খুব ভালবাসতেন। তিনি ‌উদস্থিতি‌বিদ্যায় (hydrostatic) নিয়ে অনেক পরীক্ষা করেছিলেন। এর জন্য তিনি ফ্লোরেন্স শহরে বেশ বিখ্যাত ছিলেন।

অধ্যাপনা ও গবেষণা

   ১৫৯১ সালে গ্যালিলিওর বাবা মারা যান। তাঁর বাবার অনেক ধার-দেনা ছিল। তাছাড়া ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব‌ও গ্যালিলিওর ঘারে এসে পড়ে। এইসবের জন্য তিনি পিসা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে পাজুয়হ (Padua) বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপনা শুরু করেন। ‌সেখানে তার বেতন বেশি ছিল। এখানেও তিনি  আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকেন যাতে  অতিরিক্ত কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারেন। 

   ১৫৯২ সালে গ্যালিলিও থার্মোস্কোপ নামে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন যা দিয়ে তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি পরিমাপ করা যায়। থার্মোস্কোপকে আরো উন্নত করে পরবর্তীতে থার্মোমিটার তৈরি করা হয়। এই বছরেই গ্যালিলিও সৈনিকদের ব্যবহারের কম্পাস আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কারের জন্য গ্যালিলিওর পরিচিতি আরো বেশি ছড়িয়ে পড়ে।

গ্যালিলিও-এর তোইরি সৈনিক কম্পাস
গ্যালিলিও-এর তৈরি সৈনিক কম্পাস

দূরবীণ আবিষ্কার

   ১৭ শতকের শুরুর দিকে ডাচে (বর্তমানে ন্যাদারল্যান্ড) spyglass নামে জিনিস আবিষ্কার হয় যা দিয়ে দূরের বস্তুকে কাছে দেখা যায়। এটা শোনার পরে গ্যালিলিও নিজেও প্রচুর পরীক্ষার-নিরীক্ষা করতে শুরু করেন এবং ১৬০৯ সালে দূরবীণ আবিষ্কার করতে সক্ষম হন। ডাচদের তৈরি স্পাইগ্লাস দিয়ে বস্তুর ৩ গুণ প্রতিবিম্ব তৈরি করা যেত। তবে গ্যালিলিওর তৈরি দূরবীণ দিয়ে ৩০ গুন বড় প্রতিবিম্ব তৈরি করা যায়। 

  সেসময় মানুষ চাঁদকে একটি মসৃণ গোলাকার বস্তু হিসেবে মনে করতো। গ্যালিলিও তার তৈরি দূরবীণ দিয়ে লক্ষ্য করলেন চাঁদের মধ্যে যে কলঙ্ক রয়েছে আসলে সেগুলি হল পাহাড় ও গর্ত। এর অর্থ হল পৃথিবীর মতো চাঁদও অমসৃণ প্রকৃতির। তাছাড়া এই দূরবীণের সাহায্যে গ্যালিলিও শুক্র গ্রহের কলা, বৃহস্পতির উপগ্রহ ও শনির বলয় লক্ষ্য করেন।

   গ্যালিলিও তার দূরবীণ দিয়ে বৃহস্পতি গ্রহ পর্যবেক্ষণ করেন। সেখানে তিনি তিনটি উজ্জ্বল বিন্দু পেলেন যা বৃহস্পতি গ্রহকে প্রদক্ষিণ করছে। তিনি বুঝতে পারলেন যে পৃথিবীর চারপাশে চাঁদ যেমন ঘুরছে; বৃহস্পতি গ্রহের চারপাশেও ঠিক একই ভাবে এই বিন্দুগুলি ঘুরছে। এগুলি আসলে হলো বৃহস্পতি গ্রহের চাঁদ। গ্যালিলিও এইভাবে বৃহস্পতির মোট চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন। এগুলি হল  আইও (IO), ইউরোপা (Europa), গ্যানিমিড (Ganymede) ও ক্যালিস্টো (Callisto)। এগুলো পর্যবেক্ষণ ও হিসাব করে গ্যালিলিও একটা সিদ্ধান্তে আসলেন যে পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্ব তত্ত্বটি বোধহয় ভুল এবং কোপার্নিকাস যে সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণা দিয়েছিলেন সেটি সঠিক।

গ্যালিলিও দ্বারা আবিষ্কৃত বৃহস্পতির চারটি চাঁদ
গ্যালিলিও তার আবিষ্কৃত দূরবীণ দিয়ে বৃহস্পতি গ্রহের এই চারটি চাঁদ দেখতে পান।

   কৌতূহলের বশে গ্যালিলিও তার দূরবীণ দিয়ে সূর্যের দিকে লক্ষ্য করলে এবং সৌর কলঙ্ক আবিষ্কার করেন। তবে এর জন্য গ্যালিলিওর চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পুস্তক প্রকাশনা

   গ্যালিলিও তাঁর দূরবীণ দ্বারা পর্যবেক্ষণ ও হিসাব তিনি ১৬১০ সালে একটি বইয়ে প্রকাশ করেন। বইটির নাম হল ‘The starry Messenger’ যা ৫০০ কপি ছাপানো হয়। তার এই ব‌ই পড়ে Johannes Kepler ভূয়ষী প্রশংসা করেন। ইনি হলেন একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী; যিনি গ্রহদের প্রদক্ষিণ সংক্রান্ত সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন।

   কিন্তু এই বইটির জন্য তৎকালীন গির্জা ও ধর্মযাজকদের রোশানালে তাকে পড়তে হয়। গ্যালিলিওকে সে সময় ধমকানো হয়  তিনি যেন কোপারনিকাসের মতবাদকে প্রচার না করেন। কিন্তু তিনি এইসবকে পরোয়া না করে তার ধারণাকে সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

১৬১০ সালে গ্যালিলিও Padua শহর থেকে ফ্লোরেন্সে আবার ফিরে আসেন। সেখানে তিনি নিজেকে একজন ‘দার্শনিক গণিতজ্ঞ’ হিসেবে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এর থেকে গ্যালিলিওর সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায় যে তিনি প্রাকৃতিক দর্শনকে নতুন আঙ্গিকে দেখার চেষ্টা করছেন। এই বছরেই গ্যালিলিও তার দূরবীণের সাহায্যে শনি গ্রহের বলয়গুলি দেখতে পান। 

১৬১২ সালে ‘Discourse on Floating Bodies’ প্রকাশ করেন। এখানে তিনি অ্যারিস্টটলের প্লবতা সংক্রান্ত তাত্ত্বিক মতবাদের বিরোধিতা করেন। প্লবতা হল, কোনো বস্তুকে তরলে বা গ্যাসে নিমজ্জিত করলে ওই তরল বা গ্যাস বস্তুর উপর একটি ঊর্ধ্বমুখী যে বল ক্রিয়া করে। অ্যরিস্টটলের মতে কোনো বস্তু ডুববে না ভাসবে তা নির্ভর করে বস্তুর আকার ও বস্তুর গঠনের ওপর। গ্যালিলিও বলেন, এই ডুবে বা ভেসে থাকা আসলে নির্ভর করে ঘনত্বের উপর। যদি বস্তুর ঘনত্ব তরল বা গ্যাসের ঘনত্বের তুলনায় বেশি হয় তাহলে সেটি ডুবে যাবে আর কম হলে সেটা ভেসে উঠবে। এটি প্রমাণের জন্য তিনি অনেক পরীক্ষাও করে দেখান। প্লবতা সংক্রান্ত গ্যালিলিওর কাজ Fluid Mechanics–এর ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

The Letter to Benedetto Castelli

    ১৬১৩ সালে গ্যালিলিও তার প্রাক্তন ছাত্র Benedetto Castelli তথা পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতজ্ঞকে একটি চিঠি লেখেন যা ‘The Letter to Benedetto Castelli’ নামে পরিচিত। এখানে গ্যালিলিও কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের মডেলকে সমর্থন করেন এবং বলেন এই মডেল কোনো ভাবেই ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করে না। 

   গ্যালিলিও মনে করতেন শাস্ত্রে বর্ণিত ব্যাখ্যাগুলোকে আক্ষরিক অর্থে না নিয়ে রূপক অর্থে নেওয়া উচিৎ।

   ১৬২৩ সালে গ্যালিলিও ‘The Assayer’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। এই বইয়ে তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন যে প্রকৃতিকে বোঝার জন্য দার্শনিক চিন্তার চেয়ে গাণিতিক বিশ্লেষণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য এই বইয়ের তিনি ধুমকেতু সম্পর্কে ভুল তত্ত্ব দেন। তিনি বলেন যে এগুলি আসলে দৃষ্টিভ্রম; আকাশের কোনো জ্যোতিষ্ক নয়।

গির্জার সঙ্গে সংঘাত

   ১৬৩২ সালে তিনি 'Dialogue Concerning the Two Chief World Systems' নামে একটি বই লেখেন। যেখানে তিনি কোপারনিকাসের তত্ত্বকে দুই ব্যক্তির পক্ষে ও বিপক্ষে আলোচোনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন। এর ফলে তৎকালীন চার্চের আধিকারিকরা গ্যালিলিওর বইগুলির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং গ্যালিলিওকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। তাকে জনসমক্ষে কোপারনিকাস তত্ত্বের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করতেও বাধ্য করানো হয়।

   দূরবীণ আবিষ্কার গ্যালিলিওকে যেমন বিখ্যাত করে তোলে তেমনি তার জীবনের এক বড় সমস্যাও তৈরি করে। তার সূর্যকেন্দ্রিক মতবাদ বাইবেলের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।  তখনকার দিনে ধর্মযাজকদের মনে এক ভীতি তৈরি হয়েছিল যে গ্যালিলিওর বক্তব্য হয়তো মানুষের মধ্যে ঈশ্বর বিরোধী ধারণা তৈরি করবে। । গ্যালিলিও চোখে যা দেখেছিলেন এবং হিসাব করে যা পেয়েছেন সেটি সমাজে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। গ্যালিলিও নিজে ঈশ্বরে বিশ্বাসী ক্যাথলিক ছিলেন। সেজন্য গির্জা থেকে প্রাপ্ত শাস্তি তিনি আমৃত্যু মাথা পেতে মেনে নিয়েছিলেন; আর কোনো প্রতিবাদ করেননি।

   গ্যালিলিওর সমকালীন বিজ্ঞান চর্চায় সর্বত্র অ্যারিস্টটলের প্রাকৃতিক দর্শনের ছাপ ছিল। সে সময় বিজ্ঞানকে শুধুমাত্র মৌখিক যুক্তি দ্বারা ব্যাখ্যা করা হতো। কিন্তু গ্যালিলিও এই পদ্ধতিকে বর্জন করে বিজ্ঞানকে পরীক্ষা -পর্যবেক্ষণ ও কিছু গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। এই প্রথাটি পরবর্তীতে বিজ্ঞানকে নতুনভাবে দেখার পদ্ধতি হিসেবে গৃহীত হয়।

শেষ জীবন

   জীবনের শেষের দিকে তিনি সম্পূর্ণ রূপে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। অবশেষে ১৬৪২ সালের ৮ই জানুয়ারি তিনি বার্ধক্য জনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

ইথার তত্ত্ব

অ্যারিস্টোটলের দর্শন অনুযায়ী মহাবিশ্ব পাঁচটি তত্ত্ব দিয়ে তৈরি। এদের মধ্যে প্রথম চারটি হল- মাটি, জল, বায়ু ও আগুন। পঞ্চম তত্ত্বটি হলো ইথার (eather)। তিনি বলেন, ইথার হলো একটি স্বর্গীয় বস্তু যা দিয়ে মহাকাশের জ্যোতিষ্কগুলি তৈরি হয়েছে। এটি  অবিশ্বর এবং বৃত্তাকার পথে গতিশীল। বাকি চারটি তত্ত্ব ধ্বংস হলেও ইথার অপরিবর্তিত থাকে। এই তত্ত্বের মাধ্যমে অ্যারিস্টটল পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্ব মডেলের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু গ্যালিলিও এই ইথার তত্ত্বটিকে পুরোপুরি বর্জন করেছিলেন। তিনি তাঁর তৈরি দূরবীণ দিয়ে যা পর্যবেক্ষণ করেছেন সেটির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে মহাকাশের জ্যোতিষ্কের গতিবিধি ব্যাখ্যা করার জন্য ইথার মাধ্যমে প্রয়োজন নেই। সকল জ্যোতিষ্ক এমনকি পৃথিবীও পদার্থবিজ্ঞানের কিছু নিয়ম মেনে সূর্যের চারপাশে ঘুরছে।

   এখানে একটা কথা বলা দরকার; পরবর্তীতে ইথার মাধ্যম তত্ত্বটি আবার ফিরে আসে। এর দ্বারা তরঙ্গের গতিকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও বিভিন্ন পরীক্ষা ও আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বের মাধ্যমে এই ইথার মাধ্যম তত্ত্বটি পুরোপুরি বর্জিত হয়।

তথ্যসূত্র-

https://plato.stanford.edu/entries/galileo/

https://science.nasa.gov/solar-system/galileos-observations-of-the-moon-jupiter-venus-and-the-sun/

 

আরও পড়ুন

SHARE

Related Posts

পরমাণু মডেল-এর বিবর্তন ইতিহাস

পরমাণু মডেল-এর বিবর্তন ইতিহাস

     আজ আমরা যে পরমাণু মডেল সম্পর্কে ধারণা রাখি তার সূত্রপাত হয়েছে আজ থেকে প্রায় দুই হাজার চার শ বছর আগে। অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্টের জন্মেরও আগে। দার্শনিক…

সৌর ঝড়

সৌর ঝড়-এর আগাম বার্তা! CMEs গবেষোণায় এক ধাপ এগিয়ে গেল বিজ্ঞানী মহল

সৌর ঝড় কী?            উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুতে মহাজাগতিক রশ্মিগুলি যখন পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে তখন যে আলো ছটা তৈরি হয়,…

পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার 2023

পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার 2023- “Attosecond Laser Pulse” আবিষ্কার!! কারা পেলেন??

প্রকাশিত হল 2023 সালের পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম।             পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার 2023-এর প্রাপকরা হলেন Anne L’Huillier, Pierre Agostini, Ferenc…

প্লাজমা- পদার্থের চতুর্থ অবস্থা

          কঠিন, তরল ও গ্যাসীয়- এই হল পদার্থের তিনটি অবস্থা। তবে পদার্থের আরও একটি অবস্থা আছে; এই চতুর্থ অবস্থাটি হল প্লাজমা।  নামটা শুনে হয়তো…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!